সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন আগেই। উইকেট নিচ্ছিলেন মুড়ি-মুড়কির মত। মাশরাফি বিন মুর্তজা এবার নিজেকে ছাড়িয়ে গেলেন আবারও। আরও একবার ছাড়িয়ে গেলেন বাংলাদেশের সবাইকে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে নিয়েছেন টানা চার বলে চার উইকেট। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে গড়লেন এই কীর্তি।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মঙ্গলবার আবাহনী লিমিটেডের হয়ে অগ্রণী ব্যাংকের বিপক্ষে এই ইতিহাস গড়েন মাশরাফি। ফতুল্লায় শেষ ওভারে জয়ের জন্য অগ্রণী ব্যাংকের প্রয়োজন ছিল ১৩ রান। উইকেট ছিল চারটি। প্রথম বলে আব্দুর রাজ্জাক নিয়েছেন একটি রান। পরের চার বলেই চার উইকেট নিয়ে ম্যাচ শেষ!
আবাহনীর মূল শঙ্কা হয়ে দাঁড়ানো ধীমান ঘোষকে ফিরিয়ে শুরু। ২৭ বলে ৪৬ রান করে ধীমান ক্যাচ দেন জয়রাজ শেখকে। পরের বলে প্রিয় বন্ধু রাজ্জাককে শিকার করলেন নাজমুল হাসান শান্তর ক্যাচ বানিয়ে।
পরের বলে শফিউল ইসলাম ক্যাচ দিলেন সাইফ হাসানকে। মাশরাফি প্রথমবার পেলেন হ্যাটট্রিকের স্বাদ। শেষ নয় ওখানেই। ওভারের পঞ্চম বলে কটবিহাইন্ড ফজলে রাব্বি।
সব মিলিয়ে ৯.৫ ওভারে ৪৪ রান দিয়ে ৬ উইকেট। লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে চতুর্থবার পেলেন ৫ উইকেট। ক্যারিয়ার সেরা বোলিং অবশ্য হয়নি। ২০০৬ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডেতে ২৬ রানে ৬ উইকেটই রয়ে গেছে সেরা।
বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে হ্যাটট্রিক আছে পাঁচজনের-শাহাদাত হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, রুবেল হোসেন, তাইজুল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদ। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে হ্যাটট্রিক আছে আরও ৮টি। তবে লিস্ট ‘এ’-তে টানা চার বলে উইকেট এবারই প্রথম।
মাশরাফির আগে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটের ইতিহাসে চার বলে চার উইকেট নিয়েছিলেন আর কেবল সাত জন। ১৯৭০ সালে ডার্বিশায়ায়ের হয়ে সাসেক্সের বিপক্ষে নিয়েছিলেন ফাস্ট বোলার অ্যালান ওয়ার্ড। এরপর ১৯৯৬ সালে ওয়ারউইকশায়ারের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার শন পোলক, ১৯৯৯ সালে নটিংহ্যামশায়ারের হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভ্যাসবার্ট ড্রেকস, ২০০৭ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গা, ২০১০ সালে গ্লস্টারশায়ারের হয়ে ডেভিড পেইন, ২০১৩ সালে এসেক্সের হয়ে গ্রাহাম নেপিয়ার এবং মাশরাফির আগে সবশেষ ২০১৪ সালে মহারাষ্ট্রের শ্রীকান্ত মুন্ধে।
অন্য দুই সংস্করণে অবশ্য চার বলে চার উইকেটের স্বাদ আগে পেয়েছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। টি-টোয়েন্টিতে চার বলে চার উইকেট আছে আল আমিন হোসেনের। ২০১৩ সালে বিজয় দিবস টি-টোয়েন্টিতে আবাহনীর বিপক্ষে ইউসিবি-বিসিবি দলে হয়ে এক ওভারে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। তার মধ্যে চারটি টানা চার বলে।
সিলেটে সেবার ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম বলে মেহেদি মারুফকে আউট করেছিলেন আল আমিন। দ্বিতীয় বলে হয়েছিল দুই রান। তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ পর্যন্ত টানা চার বলে ফিরিয়েছিলেন নাজমুল হোসেন মিলন, সোহরাওয়ার্দী শুভ, নাঈম ইসলাম জুনিয়র ও নাবিল সামাদকে।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে চার বলে চার উইকেটের স্বাদ পেয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। ২০১৪ সালে বিসিএলে মধ্যাঞ্চলের হয়ে উত্তরাঞ্চলের বিপক্ষে তার চার বলে চার উইকেট ছিল দারুণ মজার। প্রথম ইনিংসে টানা দুই বলে তানবীর হায়দার ও শুভাশিস রায়কে ফিরিয়ে গুটিয়ে দিয়েছিলেন উত্তরাঞ্চলকে। দ্বিতীয় ইনিংসে বল হাতে নিয়ে প্রথম দুই বলেই আউট করেন তাইজুল ইসলাম ও মুক্তার আলিকে।
সব মিলিয়ে এবারের ঢাকা লিগে ৮ ম্যাচে মাশরাফির উইকেট হলো ২৫টি। চার ও পাঁচ উইকেট দুবার করে।
মাশরাফিকে দিয়ে এবারের ঢাকা লিগে হ্যাটট্রিক হলো তিনটি। সব মিলিয়ে লিস্ট ‘এ’ মর্যাদা পাওয়ার পর ঢাকা লিগে হ্যাটট্রিক হলো মোট ৯টি।